স্বদেশ ডেস্ক:
উপনির্বাচন মানেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর একতরফাভাবে জয়জয়কারের প্রচলিত পরিবেশ বদলে যাচ্ছে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে। গত ১১ মার্চ মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ এ আসনের টানা তিনবারের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৮ জুলাই সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থী দিয়েছে। বিএনপি প্রার্থী না দিলেও সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা শেষে দেশে এসে সোমবার জানিয়েছেন, বিএনপি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।
শফি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বিএনপি থেকে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও আমি নির্বাচন করব। আমার হারানোর কিছু নেই। এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের উন্নয়নের রাজনীতি করেছি আজীবন। তাই যত দিন বেঁচে আছি, এ ধারা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা চাই।
শফি আহমদ চৌধুরী ২০০১ সালে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের কাছে পরাজিত হন তিনি।
শনিবার এ আসনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবকে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এর আগে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নিজেদের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিককে প্রার্থী মনোনীত করে। এই দুই প্রার্থী সিলেট এসে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন। কিন্তু প্রথম দিনেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে শোডাউন করেন হাবিব সমর্থকরা।
আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়ার পর সোমবার প্রথম সিলেটে এসেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে শোডাউন করেন হাবিবুর রহমান হাবিব। মাস্ক ব্যবহার ছাড়াই খোলা গাড়িতে হাত নেড়ে নেড়ে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে নিজের নির্বাচনী এলাকায় যান তিনি। জিয়ারত করেন করোনায় মৃত সাবেক এমপির কবরও। কিন্তু তাকে বরণ করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কয়েক শতাধিক মোটরসাইকেল আরোহীর প্রায় কারোর মুখেই কোনো মাস্ক ছিল না। এক মোটরসাইকেলে চড়েছিলেন তিনজন করে।
করোনার মধ্যে সরকারদলীয় প্রার্থীর এমন দায়িত্বহীন আচরণের ব্যাপারে জানতে হাবিবুর রহমান হাবিবের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি পরিচয়দানকারী শাহীন আলী কলটি রিসিভ করে বলেন, হাবিবুর রহমান প্রয়াত এমপির কবর জিয়ারতে ব্যস্ত। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার ব্যাপারে তার বক্তব্য হচ্ছে, নেতাকর্মীদের ভালোবাসা তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। তবে তিনি শোডাউনের আয়োজন করতে চাননি।
এরই মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো এমপি মাহমুদ উস সামাদের গত নির্বাচনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সোয়েব আহমদ অভিযোগ তুলেছেন, এমপি মাহমুদ উস সামাদের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো লিখিত অভিযোগ কোথাও দেওয়া হয়নি।
এদিকে মনোনয়নে চমক দেখিয়ে এ আসনে নৌকার প্রার্থী হওয়া হাবিবকে মনোনয়নবঞ্চিতরা মুখে অভিনন্দন জানালেও ক্ষোভ জমা হয়েছে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে। প্রায় ২৫ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর ভিড়ে হাবিব ছিলেন অনেকটাই আলোচনার বাইরে। প্রয়াত এমপির স্ত্রী ফারজানা সামাদ ও আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ছিলেন মূল আলোচনায়। কিন্তু দলীয় টিকিট বাগিয়ে নিয়ে সবাইকে চমকে দেন এই প্রবাসী নেতা।
এ আসনের সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করায় নৌকার পক্ষে রায় আনতে বেশ বেগ পেতে হবে হাবিবুর রহমানকে। সিলেট-৩ আসন একসময় জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল। এই আসনে টানা তিনবারের সাংসদ ছিলেন জাতীয় পার্টির এমএ মুকিত খান। মুকিত খানের দল ত্যাগ ও যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পরবর্তী সময় নির্বাচনে আর ভালো ফল করতে পারেনি জাতীয় পার্টি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, সিলেট-৩ আসনে মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩০৯ ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৮ এবং নারী ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৯১ জন।
এমপি কয়েসের মৃত্যুর বিষয়ে মামলার হুমকি আইনজীবীর : গত ১১ মার্চ মহামারী করোনায় প্রাণ হারান সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। প্রায় ৩ মাস পর এমপি কয়েসের মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন, গত নির্বাচনে তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সোয়েব আহমদ।
সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সোয়েব আহমদ রবিবার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি লেখা পোস্ট করেন। সে পোস্টে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের মৃত্যুকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে তার ব্যক্তিগত সহকারী জুলহাস আহমদের দিকে সন্দেহের তীর ছুড়েছেন।
তিনি লেখেন, ‘জীবদ্দশায় যাদের ওপরে আপনার কোনো আস্থা ছিল না তারাই কুশলীব সেজে আজ আপনার সহধর্মিণী মিসেস ফারজানা চৌধুরীর বিশাল ক্ষতি করে দিল, যার দরুন মনটা কষ্টের আকাশে পরিণত হয়েছে। ফারজানা ভাবি বুঝতে পারলেন না, কারা আপনার বিশ্বস্ত ও কাছের লোক ছিল। উনি জিরোদের হিরো ভাবলেন আর হিরোদের সরিয়ে রাখলেন। বিশ্বাস করি, কবর থেকে আপনার আত্মা তা দেখতে পাচ্ছে।
আপনার মৃত্যুটাকে আমি কোনো সময় স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারি না। কারণ মৃত্যুর ৬ দিন আগে অর্থাৎ ৫ মার্চ ২০২১ দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার জালালপুরে খেলার মাঠে ধুলো থেকে রক্ষার লক্ষ্যে আপনার মাস্কের ভেতরে কোনো ব্যক্তি ফেসিয়াল টিস্যু দিয়েছিল এবং সেই টিস্যুতে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক কোনো জীবননাশক জীবাণু দেওয়া হয়েছিল কি না?
এবং করোনা আক্রান্তের পর আপনার ব্যক্তিগত সহকারী জুলহাস আহমদ কেন বিষয়টি ৩ দিন অর্থাৎ আপনাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়ার আগ পর্যন্ত গোপন করেছিল? এমনকি আপনার অসুস্থতার বিষয়টি কেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জানাল না? বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাল না? এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বিধায় আপনার একজন অনুরাগী হিসেবে আমি শিগগির আদালতে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারামতে দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’